ছয়দফা নিউজ ডেস্ক:
ছিটমহল বিনিময়ের ৮ বছরে বদলে গেছে কুড়িগ্রামের বিলুপ্ত ছিটমহলগুলোর দৃশ্যপট। বঞ্চনার ইতিহাস মুছে এখন উন্নত জীবনের যুগে প্রবেশ করেছে এখানকার মানুষ।
গত ৮ বছরে ১ হাজার ৬৪৩ একরের দাসিয়ারছড়াসহ কুড়িগ্রামের বিলুপ্ত ১৮টি ছিটমহলে বাস্তবায়িত হয়েছে সরকারের বিভিন্ন উন্নয়ন প্রকল্প। একসময়ের অন্ধকারাচ্ছন্ন পরিবেশ এখন বিদ্যুতের আলোয় আলোকিত। শতভাগ বিদ্যুৎ, অলিগলিতে পিচঢালা সড়ক, স্বাস্থ্যকেন্দ্র, সামাজিক নিরাপত্তা, যুব প্রশিক্ষণ, ভূমির সমস্যা সমাধান আর বেশ কয়েকটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান স্থাপনে ঘুচে গেছে দীর্ঘদিনের বঞ্চনা। দাসিয়ারছড়ায় তিনটি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় স্থাপন ও চারটি বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান এমপিওভুক্ত করায় শিক্ষার আলো ছড়িয়ে পড়েছে বিলুপ্ত ছিটমহলের সর্বত্র।
২০১৫ সালের ৩১ জুলাই রাত ১২টা ১ মিনিটে ভারত-বাংলাদেশের ১৬২টি ছিটমহল বিনিময়ের ঐতিহাসিক ঘটনা ঘটে। সেই স্মৃতিকে স্মরণ করার জন্য গতকাল সোমবার রাতে কালিরহাট প্রাথমিক বিদ্যালয় মাঠে আলোচনা সভা, মোমবাতি প্রজ্বালনসহ নানান কর্মসূচি পালন করে ছিটমহল বিনিময় সমন্বয় কমিটি। এ ছাড়া জেলা সদরে উত্তরবঙ্গ জাদুঘর আলোচনা সভার আয়োজন করেছে।
ছিটমহল বিলুপ্তির পর প্রায় ১০ হাজার জনসংখ্যার দাসিয়ারছড়ায় প্রায় ২ হাজার পরিবারকে বিনামূল্যে বিদ্যুৎ সুবিধা দেওয়ার পাশাপাশি বিশুদ্ধ পানি, নিরাপদ স্যানিটেশন, তিনটি কমিউনিটি ক্লিনিক স্থাপন ও ব্যাপকভাবে সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচি চালু করা হয়। যুব প্রশিক্ষণের জন্য আইসিটি সেন্টার স্থাপন করা হয়। অবকাঠামো উন্নয়নের অংশ হিসেবে ২৬ কিলোমিটার পাকা সড়ক ও ৫টি সেতু নির্মাণ করা হয়। সরকারি খরচে নির্মাণ করা হয় মসজিদ ও মন্দির। সড়কের দুই পাশে রোপণ করা বাসকগাছ যোগ করেছে বাড়তি সৌন্দর্য।
প্রশাসন সূত্রে জানা গেছে, দাসিয়ারছড়ার শতভাগ কৃষিজমি সেচের আওতায় আনা হয়েছে। ৩ হাজার ভিজিডিসহ শতভাগ বাড়িতে নিশ্চিত করা
হয়েছে সুপেয় পানি ও সেনিটেশন ব্যবস্থা। বাংলাদেশ শিশু একাডেমি স্থাপন করেছে ১৫টি প্রাক-প্রাথমিক বিদ্যালয়। এ ছাড়া ইসলামিক ফাউন্ডেশন প্রতিষ্ঠা করেছে ১৪টি মসজিদভিত্তিক শিশু ও গণশিক্ষাকেন্দ্র। সেখানকার বাসিন্দাদের দেওয়া হয়েছে জাতীয় পরিচয়পত্র (এনআইডি) ও স্মার্টকার্ড। এসব উন্নয়নে পাল্টে গেছে এখানকার দৃশ্যপট। পরিবর্তন এসেছে জীবনমানের।
এত কিছুর পরও পৃথক ইউনিয়ন বাস্তবায়ন না হওয়ায় কিছুটা অতৃপ্তি রয়েছে দাসিয়ারছড়াবাসীর। বাংলাদেশ-ভারত ছিটমহল বিনিময় সমন্বয় কমিটির বাংলাদেশ শাখার সাধারণ সম্পাদক ও ছিটমহল আন্দোলনের অন্যতম নেতা গোলাম মোস্তফা বলেন, “৬৮ বছরে যা পাই নাই, তা দুই বছরে পেয়েছি। ছিটমহলের মানুষ এখন নিজের পরিচয়ে আত্মনির্ভরশীল। বঙ্গবন্ধুর নেতৃত্বে বাংলাদেশ স্বাধীন হওয়ার পর তার স্মৃতি ধরে রাখার জন্য প্রথম সরকার গঠনের জায়গা ‘মুজিবনগর’ নামে নামকরণ হয়েছে। তেমনি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে ছিটমহলবাসী মুক্তি পেয়েছে। তাই দাসিয়ারছড়ায় ‘হাসিনানগর’ নামে একটি ইউনিয়ন পরিষদের দাবি সবার।”
কুড়িগ্রামের ফুলবাড়ী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) সুমন দাস জানান, ছিটমহলে ইতোমধ্যে সরকারের নেওয়া পরিকল্পনা বেশিরভাগ বাস্তবায়িত হয়েছে। মূল স্রোতোধারায় ছিটমহলবাসীকে আনতে সরকারি নানামুখী উদ্যোগ বাস্তবায়নের ধারাবাহিকতা অব্যাহত থাকবে।