নিজস্ব প্রতিবেদক, গাইবান্ধা:
গাইবান্ধা সদর উপজেলার কামারজানি বন্দর এবং ফুলছড়ির উপজেলার বালাসীঘাট ও তিস্তামুখঘাটে ব্রহ্মপুত্র নদ পাড়ে সনাতন হিন্দুধর্মাবলম্বীদের অষ্টমী পুণ্যস্নানে পুণ্যার্থীর ঢল নেমেছে। মঙ্গলবার ভোর রাত ৪টা থেকে স্নানের লগ্ন শুরু হলেও বেলা বাড়ার সাথে সাথে পুণ্যার্থীদের ঢল নামে।
জেলা সদরসহ আশেপাশের উপজেলাগুলো থেকে পুণ্যার্থীর পদচারণে মুখর হয়ে উঠেছে পুরো ব্রহ্মপুত্র নদ পাড়। তাঁরা পাপমুক্তির বাসনায় ব্রহ্মপুত্র নদে স্নানে নেমেছেন। স্নানের লগ্ন শেষ হবে আজ বিকেল ৪টা ৫৬ মিনিটে। আয়োজকেরা জানিয়েছেন, বেলা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে পুণ্যার্থীদের চাপ বাড়ছে।
এদিকে বালাসীঘাটে স্নানে পুণ্যার্থীদের আসার কারণে গাইবান্ধা-বালাসী সড়কে ৬ কিলোমিটার এলাকাজুড়ে সকাল থেকে ধীরগতিতে চলছে যানবাহন।
স্থানীয়রা বলেন, আজ সকাল থেকে মহা অষ্টমী স্নানোৎসবে অংশ নিতে গাইবান্ধা সদরের কামারজানি বন্দরসহ ফুলছড়ি উপজেলার কঞ্চিপাড়া ইউনিয়নের বালাসীঘাট এবং গৎারিয়া ইউনিয়নের তিস্তামুখঘাটে পুণ্যার্থীরা ভিড় করেন। নারী-পুরুষ পুণ্যার্থীরা সড়ক পথ ও নৌপথে স্নানে অংশ নিতে আসেন। ঘাটগুলোতে পুরোহিতের কাছে মন্ত্রপাঠ করে স্নানে নেমে পড়েন তাঁরা। এদিকে স্নান উপলক্ষে ব্রহ্মপুত্র নদ পাড়ের এসব ঘাটগুলোতে কড়া নিরাপত্তাব্যবস্থা জোরদার করা হয়েছে।
মঙ্গলবার (১৬ এপ্রিল) দিনব্যাপী সদর উপজেলার কামারজানি এবং ফুলছড়ির বালাসীঘাট ও তিস্তামুখঘাটে ব্রহ্মপুত্রের বালুচরে ঐতিহ্যবাহী অষ্টমী মেলা অনুষ্ঠিত হয়। এ উপলক্ষে বালুচরে সনাতন হিন্দু ধর্মাবলম্বীদের গঙ্গাদেবীর পূজার আয়োজন করা হয়। ভোর থেকেই বিপুল সংখ্যক হিন্দু পুণ্যার্থী ব্রহ্মপুত্র নদে স্নান সেরে গঙ্গা দেবীর পূজা অর্চনা করে।
হিন্দু পঞ্জিকামতে চৈত্র মাসের অষ্টমী তিথিতে হিন্দু স¤প্রদায়ের নারী-পুরুষরা পাপ মোচনের আশায় পবিত্র অষ্টমী স্নানে অংশ নেন।
ভক্তদের বিশ্বাস, এ সময় ব্রহ্মপুত্র নদে স্নান খুবই পুণ্যের, এ স্নানে ব্রহ্মার সন্তুষ্টি লাভ করে পাপমোচন হয়। চৈত্রের অষ্টমীতে জগতের সব পবিত্র স্থানের পুণ্য ব্রহ্মপুত্রে মিলিত হয়। নদীর পানি স্পর্শমাত্রই সবার পাপ মোচন হয়। যে এই পবিত্র পানিতে স্নান করে সে চির মোক্ষ লাভ করে। এদিন পবিত্র মন্ত্রোচ্চারণের পর স্নানের সময় ফুল, বেলপাতা, ধান, দ‚র্বা, হরিতকি, ডাব, আম পাতা ইত্যাদি পিতৃকুলের উদ্দেশ্যে নদের জলে অর্পণ করেন তারা।
অষ্টমী স্নানে অংশ নিতে আসা পুণ্যার্থীরা বলেন, এই দিনে নদীতে স্নান করলে ভগবান সব পাপ থেকে মুক্ত করে দেন। তাই পাপমুক্তির আশায় প্রতি বছর এখানে আসি। দেশ ও জাতি যেন সকল দুর্যোগ থেকে মুক্তি লাভ করে এবং ধর্মীয় ভেদাভেদ ভুলে আমরা সবাই যেন জাতির কল্যাণে কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে চলতে পারি এই কামনাই করেছি সৃষ্টিকর্তার কাছে।
এই ¯œান উৎসব কমিটির নেতারা বলেন, প্রতিবছরের মতো এবারও বিভিন্ন স্থান থেকে বিপুলসংখ্যক পুণ্যার্থী ব্রহ্মপুত্র নদের পাড়ে এসেছেন। দেশ ও জাতির মঙ্গলসহ পারিবারিক শান্তি কামনা করে অনুষ্ঠিত হয় অষ্টমীর পুণ্য স্নানোৎসব। স্নান উৎসবকে কেন্দ্র করে নদের পাড়ে দুই দিন ধরে লোকজ মেলা অনুষ্ঠিত হচ্ছে। মেলায় লোকজ পণ্য, শিশুদের খেলাধুলার জিনিসপত্রসহ বিভিন্ন খাদ্যসামগ্রীর পসরা সাজান দোকানিরা। অষ্টমীর স্নান উপলক্ষে ব্রহ্মপুত্র নদ পাড়ে তৈরি হয়েছে উৎসবমুখর পরিবেশ।