নিজস্ব প্রতিবেদক, গাইবান্ধা:
গাইবান্ধার পাঁচটি সংসদীয় আসনে দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ভোটগ্রহণ শেষ হয়েছে। এখন চলছে ভোট গণনা। রোববার (০৭ জানুয়ারি) সকাল ৮টা থেকে ব্যালট পেপারের মাধ্যমে বিকাল ৪টা পর্যন্ত টানা ভোটগ্রহণ অনুষ্ঠিত হয়। তবে ভোটার উপস্থিতি ছিল কম।
সকাল থেকে গাইবান্ধার পাঁচটি সংসদীয় আসনের নির্বাচনি এলাকায় হিমেল বাতাস, কুয়াশা আর কনকনে শীত ছিল। এর ফলে ভোটারের উপস্থিতিও ছিল বেশ কম। তবে বেলা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে উপস্থিতি কিছুটা বাড়ে, যদিও তা সন্তোষজনক নয়। নির্বাচনে বিচ্ছিন্ন কিছু ঘটনা ছাড়া তেমন কোন বড় অঘটনের খবর পাওয়া যায়নি।
জেলা রিটার্নিং কর্মকর্তার কার্যালয় সূত্রে জানা যায়, দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে গাইবান্ধার সাত উপজেলা নিয়ে পাঁচটি সংসদীয় আসনের ৬৪৬টি কেন্দ্রের ৪ হাজার ৪২৩টি ভোটকক্ষে নির্বাচনের ভোটগ্রহণ অনুষ্ঠিত হচ্ছে। এরমধ্যে গাইবান্ধা-১ (সুন্দরগঞ্জ) ১১৪টি, গাইবান্ধা-২ (সদর) ১১৪টি, গাইবান্ধা-৩ (পলাশবাড়ী-সাদুল্লাপুর) ১৩৪টি, গাইবান্ধা-৪ (গোবিন্দগঞ্জ) ১৩৯টি এবং গাইবান্ধা-৪ (সাঘাটা-ফুলছড়ি) আসনে ১৪৫টি ভোটকেন্দ্র রয়েছে। এসব ভোটকেন্দ্রে ভোটারদের ভোটগ্রহনের দায়িত্ব পালন করছেন ১৩ হাজার ৯১৫ জন প্রিসাইডিং, সহকারী প্রিসাইডিং এবং পোলিং অফিসার।
এই নির্বাচনে জেলার ৫টি আসনে লড়ছেন আওয়ামীলীগ, জাতীয় পার্টি ও জাসদসহ এগারোটি রাজেনৈতিক দল এবং দলীয় মনোনয়নবঞ্চিত স্বতন্ত্র মিলে ৩৫জন প্রার্থী। এরমধ্যে গাইবান্ধা-১ (সুন্দরগঞ্জ) আসনে ১০ জন, গাইবান্ধা-২ (সদর) আসনে ৫ জন, গাইবান্ধা-৩ (পলাশবাড়ী-সাদুল্লাপুর) আসনে ১১ জন, গাইবান্ধা-৪ (গোবিন্দগঞ্জ) আসনে ৩ জন এবং গাইবান্ধা-৫ (সাঘাটা-ফুলছড়ি) আসনে ৬ জন প্রার্থী প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। এরমধ্যে স্বতন্ত্র ১০ জন এবং ৪ জন নারী প্রার্থী রয়েছেন।
গাইবান্ধার পাঁচটি আসনে পুরুষ ভোটার ১০ লাখ ১১ হাজার ৫৬৮ জন, নারী ভোটার ১০ লাখ ৪১ হাজার ১০৯ জন এবং তৃতীয় লিঙ্গের ২১ জনসহ মোট ভোটার সংখ্যা বিশ লাখ ৫২ হাজার ৬৯৭ জন। এরমধ্যে গাইবান্ধা-১ (সুন্দরগঞ্জ) তিন লাখ ৯৩ হাজার ৪৪ জন, গাইবান্ধা-২ (সদর) তিন লাখ ৮১ হাজার ৯৬৯ জন, গাইবান্ধা-৩ (পলাশবাড়ী-সাদুল্লাপুর) চার লাখ ৭৪ হাজার ৮৭৬ জন, গাইবান্ধা-৪ (গোবিন্দগঞ্জ) চার লাখ ৩৯ হাজার ৯২৫ জন এবং গাইবান্ধা-৪ (সাঘাটা-ফুলছড়ি) আসনে তিন লাখ ৬২ হাজার ৮৮৩ জন ভোটার রয়েছেন।
জেলা নির্বাচন কর্মকর্তা মো. আব্দুল মোত্তালিব বলেন, নির্বাচনে পর্যাপ্ত সংখ্যক আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্য মোতায়েন করা হয়েছে। এছাড়া নির্বাচন অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষতার সাথে অনুষ্ঠানের লক্ষ্যে আচরণবিধি প্রতিপালন নিশ্চিতকরণের পাশাপাশি নির্বাচনি এলাকার সার্বিক আইন-শৃঙ্খলা রক্ষা, অপরাধ প্রতিরোধ ও মোবাইল কোর্ট পরিচালনা এবং স্ট্রাইকিং ফোর্সকে দিক নির্দেশনা প্রদানের জন্য ৩৫ জন এক্সিকিউটিভ ম্যাজিস্ট্রেট ও ১৫ জন জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট দায়িত্ব পালন করছেন। প্রতিটি সাধারণ ভোট কেন্দ্রে ১৫ জন এবং গুরুত্বপূর্ন ভোট কেন্দ্রে ২০-২৫ জন আইন-শৃঙ্খলা সদস্য দায়িত্ব পালন করছেন। নির্বাচনকালীন সময়ে স্ট্রাইকিং ফোর্স হিসেবে দায়িত্ব পালনের জন্য সেনাবাহিনীর ২৫ প্লাটুন সদস্য, ২৩ প্লাটুন বিজিবি, প্রতিটি আসনে র্যাবের ০২ টি করে মোট ১০ টি টিম, ০২ (দুই) ইউনিয়নের জন্য পুলিশের একটি করে টহল টিম এবং ৫৬ জন ব্যাটালিয়ন আনসার মোতায়েন করা হয়েছে।
তিনি বলেন, এরআগে ভোটগ্রহণ কর্মকর্তাদের নিয়োগ প্রদান এবং তাদের সকল ধরনের প্রশিক্ষণ দেয়া হয়েছে। নির্বাচনকালীন সময়ে আগ্নেয়াস্ত্র পরিবহন ও প্রদর্শন ০৯ জানুয়ারি পর্যন্ত সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ করা হয়েছে। নির্বাচনী পরিবেশ পর্যবেক্ষণে বিভিন্ন দপ্তরের কর্মকর্তা ও সম্মানীত নাগরিকদের সমন্বয়ে ভিজিল্যান্স টিম গঠন করা হয়েছে। এছাড়া জেলার রেলপথ, রেলস্টেশন এবং গুরুত্বপূর্ন পয়েন্টসমূহে দুইশত পনের জন আনসার ও ভিডিপি সদস্য মোতায়েন করা হয়েছে।
দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে গাইবান্ধা-১ (সুন্দরগঞ্জ) আসনে বর্তমান সংসদ সদস্য ও জাতীয় পার্টি মনোনীত শামীম হায়দার পাটোয়ারী ‘লাঙ্গল’, বাংলাদেশ কল্যাণ পার্টির আইরিন আক্তার ‘ঘড়ি’, বাংলাদেশ সাংস্কৃতিক মুক্তিজোটের খন্দকার রবিউল ইসলাম ‘ছড়ি’, ন্যাশনাল পিপলস পার্টির (এনপিপি) মর্জিনা খান ‘আম’, কৃষক শ্রমিক জনতা লীগের মো. আবু বক্কর সিদ্দিক ‘গামছা’, জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল (জাসদ) প্রার্থী মো. গোলাম আহসান হাবীব মাসুদ ‘মশাল’, বাংলাদেশ কংগ্রেসের মো. ফখরুল হাসান ‘ডাব’, বাংলাদেশ ন্যাশনাল অ্যালায়েন্স (বিএনএ) প্রার্থী মো. ওমর ফারুক সিজার ‘নোঙ্গর’ এবং স্বতন্ত্র প্রার্থী মো. জয়নাল আবেদীন ‘ট্রাক’ ও আব্দুল্লাহ নাহিদ নিগার ‘ঢেঁকি’ প্রতীক নিয়ে নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন।
গাইবান্ধা-২ (সদর) আসনে সাবেক সংসদ সদস্য ও জাতীয় পার্টি মনোনীত মো. আব্দুর রশিদ সরকার ‘লাঙ্গল’, স্বতন্ত্র প্রার্থী শাহ সারোয়ার কবির ‘ট্রাক’, স্বতন্ত্র প্রার্থী মোছা. মাছুমা আক্তার ‘ঈগল’, ন্যাশনাল পিপলস পার্টির জিয়া জামান খান ‘আম’ এবং জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দলের মো. গোলাম মারুফ মনা ‘মশাল’ প্রতীক নিয়ে নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন।
গাইবান্ধা-০৩ (পলাশবাড়ী-সাদুল্লাপুর) আসনে বর্তমান সংসদ সদস্য ও আওয়ামী লীগ মনোনীত অ্যাডভোকেট উম্মে কুলসুম স্মৃতি ‘নৌকা’, জাতীয় পার্টির মইনুর রাব্বী চৌধুরী ‘লাঙ্গল’, স্বতন্ত্র প্রার্থী সাহারিয়া খান বিপ্লব ‘ট্রাক’, স্বতন্ত্র প্রার্থী মো. মফিজুল হক সরকার ‘ঈগল’, বিএনএ’র মো. মঞ্জুরুল হক ‘নোঙ্গর’, কৃষক শ্রমিক জনতা লীগের মো. মোস্তফা মনিরুজ্জামান ‘গামছা’, স্বতন্ত্র প্রার্থী মো. আজিজার রহমান ‘ঢেঁকি’, বাংলাদেশ কল্যান পার্টির মাহমুদুল হক ‘হাতঘড়ি’, ন্যাশনাল পিপলস পার্টির জাহাঙ্গীর আলম সরকার ‘আম’ এবং জাসদ‘র খাদিমুল ইসলাম খুদি ‘মশাল’ প্রতীক নিয়ে নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন।
গাইবান্ধা-০৪ (গোবিন্দগঞ্জ) আসনে সাবেক সংসদ সদস্য ও আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থী মো. আবুল কালাম আজাদ ‘নৌকা’, জাতীয় পার্টির কাজী মো. মশিউর রহমান ‘লাঙ্গল’, বর্তমান সংসদ সদস্য ও স্বতন্ত্র প্রার্থী মনোয়ার হোসেন চৌধুরী ‘ট্রাক‘প্রতীক নিয়ে নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন।
এছাড়া গাইবান্ধা-৫ (সাঘাটা-ফুলছড়ি) আসনে বর্তমান সংসদ সদস্য ও আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থী মাহমুদ হাসান রিপন ‘নৌকা’, স্বতন্ত্র প্রার্থী মো. শামসুল আজাদ শীতল ‘ঈগল’, বিকল্প ধারা বাংলাদেশের জাহাঙ্গীর আলম ‘কুলা’, ন্যাশনাল পিপলস পার্টির মো. ফারুক মিয়া ‘আম’ এবং স্বতন্ত্র প্রার্থী ফারজানা রাব্বি বুবলি ‘ট্রাক’ প্রতীক নিয়ে নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। এরমধ্যে গত ৩ জানুয়ারি সংবাদ সম্মেলন করে জাতীয় পার্টির মো. আতাউর রহমান আতা ‘লাঙ্গল’ নির্বাচন থেকে সরে দাঁড়ানোর ঘোষনা দেন।