নিজস্ব প্রতিবেদক, গাইবান্ধা:
বাংলা নতুন বছরের শুরুর দিনটিতে বৈশাখী মেলার আয়োজন বাঙালির ঐতিহ্য। বৈশাখ আর মেলা যেন একই সুঁতোয় গাঁথা। এর শুরুটা গ্রামকেন্দ্রিক হলেও ধীরে ধীরে তা মফস্বলের ইট-পাথরের শহরেও জায়গা করে নিয়েছে। আয়োজন করা হচ্ছে বৈশাখী মেলার। গাইবান্ধা জেলা শহরের স্বাধীনতা প্রাঙ্গণে কয়েক বছর ধরেই বৈশাখের প্রথম দিনে শুরু হয় ভিন্নধর্মী বৈশাখী মেলার। এবারও ব্যতিক্রম হয়নি। আবহমান বাংলার নানা তৈজসপত্র আর কুটির শিল্পের নানা ঐতিহ্যবাহী উপকরণ নিয়ে এই আয়োজন।
গাইবান্ধা জেলা প্রশাসন বাংলা নববর্ষ উপলক্ষে সাত দিনব্যাপী এই বৈশাখী মেলার আয়োজন করে। গত রোববার পয়লা বৈশাখে মেলার উদ্বোধন করা হয়। সাত দিনের বৈশাখী মেলার মঞ্চে বাউলসংগীত, লোকজ নৃত্য, পালাগান ছাড়াও নানা লোকজ খেলা পরিবেশিত হবে। জাতীয় ক্ষুদ্র ও কুটির শিল্প সমিতির সহযোগিতায় মেলায় লোকজ ঐতিহ্যের চল্লিশ স্টল বসেছে। শিশুদের বিনোদনের জন্য আছে নাগরদোলাসহ নানা আয়োজন।
মেলার আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করেন গাইবান্ধা-২ (সদর) আসনের সংসদ সদস্য শাহ্ সারোয়ার কবির। গাইবান্ধা জেলা প্রশাসক কাজী নাহিদ রসুলের সভাপতিত্বে উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে অন্যান্যের মধ্যে গাইবান্ধা পৌরসভার মেয়র মো. মতলুবর রহমান, পুলিশ সুপার মো. কামাল হোসেনসহ গাইবান্ধা জেলা প্রশাসন, জেলা পুলিশের কর্মকর্তা, বীর মুক্তিযোদ্ধা, রাজনীতিক, সাংবাদিক, সংস্কৃতিকর্মী, সরকারি-বেসরকারি বিভিন্ন দপ্তরের কর্মকর্তাবৃন্দ এবং স্কুল-কলেজের শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা উপস্থিত ছিলেন।
বর্ষবরণের এই উৎসবে অতিথিরা বলেন, পয়লা বৈশাখের এ উৎসব প্রমাণ করে বাংলাদেশ অসাম্প্রদায়িক চেতনার সম্প্রীতির দেশ। উৎসবের মাধ্যমে অসাম্প্রদায়িক চেতনার মূলমন্ত্র আগামীর প্রজন্মের কাছে ছড়িয়ে দিতে হবে।
মেলা প্রাঙ্গণের স্টলগুলোতে থরে থরে সাজানো দেশজ নানা পণ্যের সম্ভার। পাশেই কয়েকটি স্টলে বিক্রির জন্য রাখা মাটির তৈরি বিভিন্ন পণ্য। এক স্টলে দেখা গেল হরেক রকম পাখা। আরেক স্টলে বাঁশের তৈরি বিভিন্ন পণ্য। পাশের স্টলে বিক্রি হচ্ছে পাটের তৈরি নানা ধরনের ব্যাগ। এক ব্যক্তি পসরাবোঝাই ঝোলা কাঁধে ঝুলিয়ে বাজাতে বাজাতে বিক্রি করছেন বাঁশের বাঁশি।
বৈশাখের বারোয়ারি মেলা বলতে যা বোঝানো হয় এই মেলায় তার অনেকটাই দেখা গেল। পাশাপাশি ছিল কদমা, খাজা, গজা, মওয়া মুড়কি, বাতাসা, নিমকি, মিঠাই, নানা ধরনের আচারসহ বাহারি লোকজ খাদ্যসামগ্রীর সমাহার। এ ছাড়া আছে আনন্দের নানা উপকরণ। মেলায় কোনো কোনো স্টলে দেখা গেল কাঠের তৈরি নানা বাদ্যযন্ত্র, অন্দরসাজের নানা উপকরণ। শোপিস, কার্পেট, পাপোস, ওয়াল র্যা ক, শিকা, কাগজের ফুল ও পুতুল, শোলার তৈরি পাখি, মাটির ঘড়া, সরাচিত্র, লক্ষ্মীর ঝাঁপি, টেপা পুতুল, সৃষ্টিকর্তার নাম খোদাই করা তামার থালা, ঘটিসহ নানা পণ্য। সব মিলিয়ে সত্যিকার এক গ্রামীণ মেলা। শহুরেজীবনে গ্রামীণ মেলার এ এক ভিন্নধর্মী স্বাদ। আগামী ২০ এপ্রিল পর্যন্ত প্রতিদিন সকাল ১১টা থেকে রাত ৮টা পর্যন্ত চলবে এই মেলা।