পরীক্ষামূলক সম্প্রচার চলছে...
বৃহস্পতিবার, নভেম্বর ২১, ২০২৪

গাইবান্ধায় দুই দশকে নিভে গেছে ৩৬ সিনেমা হলের রূপালী পর্দার আলো

কায়সার রহমান রোমেল:
উত্তরের জেলা গাইবান্ধার সাধারণ মানুষের বিনোদনের প্রধান মাধ্যম ছিল সিনেমা। নব্বইয়ের দশক পর্যন্ত জেলা সদরসহ সাত উপজেলায় ৩৮টি সিনেমা হলের সবগুলোর আঙিনা দর্শক পদচারণায় মুখরিত থাকত। রাস্তার পাশে দেখা যেত সিনেমার রঙিন পোস্টার। দিনভর চলতো মাইকে প্রচারণা। সারাদিন হাড়ভাঙা খাটুনির পর সন্ধ্যায় সিনেমা হলে ভিড় জমাতো সাধারণ মানুষ। প্রতিটি হলে সকাল, দুপুর, সন্ধ্যা ও রাতে চারটি প্রদর্শনী চললেও প্রতিটি প্রদর্শনী নারী ও পুরুষ দর্শকে পরিপূর্ণ থাকতো। এখন আর সে দিন নেই। একে একে নিভেছে গাইবান্ধার সিনেমা হলগুলোর বাতি। ক্রমশ: নিভে যাচ্ছে সিনেমা হলের রূপালী পর্দার আলো। গত দুই দশকে বন্ধ হয়ে গেছে জেলার ৩৬টি প্রেক্ষাগৃহ। এরমধ্যে পাঁচ উপজেলায় এখন সিনেমা হল নেই একটিও। গোটা জেলায় ঢিমেতালে টিকে আছে মাত্র ২টি হল। এরমধ্যে নিয়মিত ছবি প্রদর্শিত হচ্ছে ১টিতে। এখন কেবল হল ভাঙার প্রতিযোগিতা চলছে। সিনেমা হল ভেঙে নির্মাণ করা হচ্ছে মাল্টিকমপ্লেক্স, গুদাম, গ্যারেজ, শপিংমল বা বেসরকারি হাসপাতাল। ফলে সিনেমা হলে কর্মরত বিপুল সংখ্যক শ্রমিক-কর্মচারি পেশা ছেড়েছেন কিংবা বেকার হয়ে দুর্ভোগ পোহাচ্ছেন।

জেলা তথ্য অফিস সূত্রে জানা যায়, গাইবান্ধার সাত উপজেলার ৩৮টি সিনেমা হলের মধ্যে জেলা শহরে ছিল ৩টি সিনেমা হল। আর গোবিন্দগঞ্জ উপজেলা সদরে সিনেমা হল ছিল ৪টি, মহিমাগঞ্জে ৩টি এবং ফাঁসিতলায় ১টি। এছাড়া পলাশবাড়ি সদরে ২টি এবং এ উপজেলার কোমরপুরে ২টি ও ঢোলভাঙ্গায় ২টি, সাদুল্লাপুর উপজেলা সদরে ১টি, ধাপেরহাটে ২টি, নলডাঙ্গায় ২টি ও মীরপুরে ১টি, সুন্দরগঞ্জ উপজেলা সদরে ২টি, বামনডাঙ্গায় ২টি ও ধর্মপুরে ১টি, সাঘাটা উপজেলা সদরে ২টি, বোনারপাড়ায় ২টি ও জুমারবাড়িতে ১টি, ফুলছড়ি উপজেলা সদরে ১টি ও কালিরবাজারে ১টি হলে নিয়মিত প্রদর্শিত হতো সিনেমা। এছাড়া গাইবান্ধা সদর উপজেলার বাদিয়াখালীতে ১টি ও দারিয়াপুরে ছিল ২টি সিনেমা হল।

কিন্তু দর্শক শূন্যতায় এখন গাইবান্ধায় নিয়মিত সিনেমা হল চালু রয়েছে মাত্র ১টি। এটি জেলা শহরের সার্কুলার রোডের তাজ সিনেমা হল। এছাড়া সাঘাটার জুমারবাড়িতে অনিয়মিতভাবে ১টি সিনেমা হলে চলে চলচ্চিত্রের প্রদর্শন।

সংশ্লিষ্টরা বলছেন, যে হলগুলো টিকে আছে তা লোকসান গুনে চালাতে হচ্ছে। ছবি চালিয়ে মাস শেষে বিদ্যুৎ বিল, কর্মকর্তা-কর্মচারীদের বেতনসহ নানা মেইনটেন্যান্স খরচ তোলা যাচ্ছে না। লোকসান গুনতে গুনতে হল মালিকদের পীঠ দেয়ালে ঠেকেছে। ব্যবসায়িক মন্দার কারণেই একের পর এক সিনেমা হল বন্ধ হয়ে যাচ্ছে। এখন যে সিনেমাগুলো নির্মিত হচ্ছে সেগুলো দর্শকের আগ্রহ তৈরি করতে পারছে না।

নাগরিক সংগঠন জনউদ্যোগ গাইবান্ধার সদস্য সচিব প্রবীর চক্রবর্তী বলেন, মানহীন সিনেমা, অনুন্নত পরিবেশ, হল আধুনিকায়ন না হওয়া, হাতের মুঠোয় ইউটিউব, নেটফ্লিক্স, আইফ্লিক্সে সিনেমা দেখার অপার সুযোগ ইত্যাদি সিনেমা হল থেকে দর্শকদের মুখ ফিরিয়ে নেয়ার কারণ।

নাট্যকার-নির্দেশক মো. আমিন বলেন, ভালো কনটেন্ট ছাড়া মালিকরা সিনেমা হল চালাতে পারবেন না। ভালো কনটেন্টের অভাবে লোকসান গুনছেন তারা। মৌলিক গল্পের সিনেমা বানাতে হবে। ভালো কনটেন্ট এলেই সিনেমার মন্দাভাব কেটে যাবে। একটি ভালো সিনেমা বানাতে হলে ভালো বাজেট লাগবে। সেই বাজেট যদি না তুলে আনা যায়, তাহলে ভালো সিনেমা নির্মাণ করা যাবে না। এজন্য সিনেমা হলগুলোর আধুনিকায়ন এবং পরিবেশ উন্নত করতে হবে।

আরো পড়ুন

মতামত দিন

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে

সর্বশেষ সংবাদসমূহ

বিশেষ সংবাদ