ছয় দফা নিউজ ডেস্ক:
দেশে মাত্র ৯ বছরের ব্যবধানেই ড্রাগন ফলের আবাদ বেড়েছে ১১৬ গুণ। বিস্ময়কর সত্য হলেও দেশে ফলটির উৎপাদন বেড়েছে প্রায় ৪০০ গুণ। যখন দেশের সর্বত্র ছড়িয়ে পড়েছে পুষ্টিসমৃদ্ধ এই ফলটি, তখন আলোচনায় এসেছে হরমোন বা টনিক ব্যবহারের কথা। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমেও বড় আকারের ড্রাগন নিয়ে চলছে নেতিবাচক প্রচারণা। এমন পরিস্থিতিতে কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, বড় আকারের ড্রাগন কোনোভাবেই অনিরাপদ নয়। প্ল্যান্ট গ্রোথ রেগুলেটরস হিসেবে যে জিবরেলিক এসিড বা টনিক ব্যবহার করা হচ্ছে তা বিজ্ঞানসম্মত। এর ফলে স্বাস্থ্যহানির কোনো সম্ভাবনা নেই। তবে দেশে উৎপাদিত ড্রাগন নিয়ে কৃষি গবেষণা প্রতিষ্ঠানগুলোর গবেষণা করা উচিৎ বলেও মনে করেন কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের কর্মকর্তারা। একইসঙ্গে ড্রাগন আবাদে হরমোন বা টনিক ব্যবহারের মাত্রা নির্ধারণ করা উচিৎ বলেও মনে করেন তারা।
দেশে ২০১০ সালের পর থেকে ব্যক্তি উদ্যোগে ড্রাগন চাষ শুরু হয়। পরে ২০১৪ সালে কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের ‘বছরব্যাপী ফল উৎপাদনের মাধ্যমে পুষ্টি উন্নয়ন প্রকল্প’ এর অধীনে বাণিজ্যিকভাবে ড্রাগন চাষ শুরু হয়। কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের তথ্যমতে, দেশে সাধারণত বাউ ড্রাগন-১, বাউ ড্রাগন-২, বারি ড্রাগন-১, পিংক ড্রাগন, ভেলভেট ড্রাগন ও ইয়োলো ড্রাগন ফলের চাষ হয়ে থাকে। সবচেয়ে বেশি চাষ হয় গোলাপি ড্রাগন ও বাউ ড্রাগন-২। তথ্যমতে, ড্রাগন ফলে প্রচুর পরিমাণে অ্যান্টি অক্সিডেন্ট রয়েছে। এরমধ্যে ক্যালসিয়ামও থাকে ভালো পরিমাণে। যাদের বোন ডেনসিটি বা হাড়ের কোনো সমস্যা আছে তাদের শরীরে ক্যালসিয়ামের ঘাটতি পূরণ করার জন্য ড্রাগন ফল অত্যন্ত উপকারী।
বাচ্চাদের ভিটামিন এ এবং বিটা ক্যারোটিনের চাহিদা পূরণে ড্রাগন ফল দেওয়া যেতে পারে। চোখের সমস্যা বা দৃষ্টিশক্তি ভালো রাখতে শুধু বাচ্চাদেরই নয়, বড়দের শরীরেও ভিটামিন এ ও বিটা ক্যারোটিনের যোগান দেয় ড্রাগন ফল। ড্রাগন ফলে ভিটামিন বি ও থায়ামিনের পরিমাণ অনেক বেশি থাকে। ড্রাগন ফলে যে ছোট ছোট সিডগুলো থাকে তাতে আছে ক্যালসিয়াম, ভিটামিন বি, প্রোটিন। ড্রাগনে আয়রনও পাওয়া যায় প্রচুর পরিমাণে। এছাড়া ড্রাগনে থাকে ফাইবারও। কোলনের সমস্যা, কোষ্ঠকাঠিন্য, পাইলসÑ এ ধরনের ক্ষেত্রে শরীরকে সুস্থ রাখার জন্য ফাইবার অনেক বেশি দরকার হয়।
বছরব্যাপী ফল উৎপাদনের মাধ্যমে পুষ্টি উন্নয়ন প্রকল্পের প্রকল্প পরিচালক ড. মো. মেহেদি মাসুদ বলেন, দেশে ইদানীং ড্রাগন ফল আমাদের প্রধান ফল হিসেবে পরিগণিত হয়ে গেছে। রাজধানীসহ দেশের প্রত্যন্ত অঞ্চলের এমন কোনো ফলের দোকান নেই যেখানে ড্রাগন ফল নেই। এটি সম্প্রতি কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের বছরব্যপী ফল উৎপাদনের মাধ্যমে পুষ্টি উন্নয়ন প্রকল্পের মাধ্যমে প্রদর্শনী স্থাপনের মধ্যমে এই ব্যাপক সাফল্য অর্জন করেছে। ড্রাগন ফল অত্যন্ত পুষ্টিকর ফল এবং চাষাবাদ লাভজনক। আবাদের এক বছর পর থেকেই ফল উৎপাদন শুরু হয়। যে কারণে এটি কৃষকদের কাছে অতিদ্রুত খুব জনপ্রিয়তা পেয়েছে।
তিনি বলেন, ইদানীং দেখা যাচ্ছে ফল বড় করার জন্য কৃষক ভাইরা হরমোন বা প্ল্যান্ট গ্রোথ রেগুলেটরস ব্যবহার করছে। প্ল্যান্ট গ্রোথ রেগুলেটরস হিসেবে যেগুলো ব্যবহার করা হয় তারমধ্যে বহুল প্রচলিত হচ্ছে জিবরেলিক এসিড, অক্সিজ, ইনডোল এসিডিক- এগুলো বিজ্ঞান কর্তৃক স্বীকৃত। ১৯৩০ সালে সর্বপ্রথম দুজন বিজ্ঞানী জিবরেলিক এসিড আবিষ্কার করে। এর ফলে কৃষিতে বিপ্লব আসে। বিশেষ করে সমস্ত সবজি, ফল, ভুট্টার ব্যাপক উৎপাদন বৃদ্ধি পায়। আপেলে প্ল্যান্ট রেগুলেটর ব্যবহৃত হয়, জিএ-৩ ব্যবহৃত হয়, এত আঙ্গুর বাজারে দেখা যায়- এমন কোনো আঙ্গুর নেই যেখানে প্ল্যান্ট গ্রোথ রেগুলেটরস ব্যবহার করা হয়নি। প্রত্যেকটি গাছে বড় বড় আঙ্গুর, প্ল্যান্ট গ্রোথ রেগুলেটরের ফল। প্ল্যান্ট গ্রোথ রেগুলেটরস, বিশেষত জিবরেলিক এসিড বা জিবরেলিন। এগুলো হচ্ছে অর্গানিক এসিড।