ছয় দফা নিউজ ডেস্ক:
আসন্ন জাতীয় নির্বাচন, সম্প্রতি ঘোষণা করা বিশ্বজুড়ে যুক্তরাষ্ট্রের শ্রম ইস্যুসহ দ্বিপক্ষীয় সম্পর্ক নিয়ে পররাষ্ট্র সচিব মাসুদ বিন মোমেনের সঙ্গে বৃহস্পতিবার (৩০ নভেম্বর) সকাল ১১টায় এক ঘণ্টাব্যাপি সময় বৈঠক করেন বাংলাদেশে নিযুক্ত যুক্তরাষ্ট্রের রাষ্ট্রদূত পিটার হাস।
এই বৈঠকে দ্বিপাক্ষিক সম্পর্কের উন্নয়ন নিয়ে আলোচনা হয়েছে বলে যুক্তরাষ্ট্রের দূতাবাস জানিয়েছে।
পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ কে আব্দুল মোমেন সাংবাদিকদের বলেন, যুক্তরাষ্ট্রের শ্রমনীতি ঘোষণায় বাংলাদেশ উদ্বিগ্ন না। এদিকে, আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের বৃহস্পতিবার দুপুরে বলেন, মার্কিন রাষ্ট্রদূত পিটার হাস রাষ্ট্রদূত হিসেবে তার আচরণের সীমা মেনে চলবেন আশা করে সরকার।
পররাষ্ট্র সচিব মাসুদ বিন মোমেনের সঙ্গে রাষ্ট্রীয় একটি অতিথি ভবনে বৃহস্পতিবার সকাল ১১টার দিকে এক ঘণ্টাব্যাপি সময়ে বৈঠক করেন যুক্তরাষ্ট্রের রাষ্ট্রদূত পিটার হাস। বৈঠকে ঢাকায় অবস্থানরত যুক্তরাষ্ট্রে নিযুক্ত বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত মোহাম্মদ ইমরান এবং পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মহাপরিচালক খন্দকার মাসুদ উল আলম উপস্থিত ছিলেন। এই সময় সাংবাদিকরা বৈঠক বিষয়ে জানতে চাইলে দুইপক্ষের কেউই কোনো মন্তব্য করতে রাজি হননি।
কূটনৈতিক সূত্রগুলো বলছে, এই বৈঠকে দুইপক্ষের আলোচনায় নির্বাচন, শ্রম ইস্যূতে যুক্তরাষ্ট্রের নতুন ঘোষণাসহ দ্বিপক্ষীয় ইস্যূগুলো নিয়ে আলোচনা হয়। এর আগে গত ২০ নভেম্বর ওয়াশিংটনে অবস্থিত বাংলাদেশ মিশন বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের চিঠি দিয়ে জানায় যে প্রেসিডেন্ট বাইডেনের শ্রমনীতি স্মারকের আওতায় বাংলাদেশকে লক্ষ্যবস্তুতে পরিণত করা হতে পারে। বৈঠকে বিষয়টি নিয়ে আলোচনা হয়েছে।
নির্বাচন নিয়ে বৈঠকে রাষ্ট্রদূত পিটার হাস শান্তিপূর্ণ এবং সবগুলো রাজনৈতিক দলের অংশগ্রহণে নির্বাচন অনুষ্ঠানের কথা বললে পররাষ্ট্র সচিব মাসুদ বিন মোমেন আসন্ন নির্বাচন নিয়ে সকল প্রস্তুতি সম্পর্কে রাষ্ট্রদূতকে জানান। বৈঠকে মার্কিণ পর্যবেক্ষকদের নির্বাচনে অংশগ্রহণ নিয়ে আলোচনা হয়। এছাড়া বৈঠকে দুইপক্ষের সম্পর্ক আরো কীভাবে শক্তিশালি করা যায় সে বিষয়ে আলোচনা হয়।
পররাষ্ট্র সচিবের সঙ্গে রাষ্ট্রদূতের বৈঠক শেষে ঢাকায় অবস্থিত যুক্তরাষ্ট্র দূতাবাসের সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে জানান হয়, দ্বিপাক্ষিক সম্পর্কের উন্নয়ন নিয়ে আলোচনা করতে বৃহস্পতিবার রুটিন বৈঠক করেন রাষ্ট্রদূত পিটার হাস এবং পররাষ্ট্র সচিব মোমেন।
উল্লেখ্য যে পূর্বনির্ধারিত ১০ দিনের ছুটি কাটিয়ে রাষ্ট্রদূত হাস গত সোমবার ঢাকায় ফিরে বৃহস্পতিবার পররাষ্ট্র সচিবের সঙ্গে বৈঠক করেন। রাষ্ট্রদূত পিটার হাসের ছুটিকালিন সফরটি দেশে বেশ আলোচিত হয়। ছুটিতে যাওয়ার আগে আওয়ামী লীগ, বিএনপি ও জাতীয় পার্টির নেতাদের কাছে যুক্তরাষ্ট্রের সহকারী পররাষ্ট্রমন্ত্রী ডোনাল্ড লু-এর চিঠি পৌঁছে দেন হাস।
ওই চিঠিতে যুক্তরাষ্ট্র বাংলাদেশে সহিংসতামুক্ত, অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন এবং নিঃশর্ত সংলাপের আহ্বান জানায়।
আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের বৃহস্পতিবার দুপুরে সাংবাদিকদের বলেন, মার্কিন রাষ্ট্রদূত পিটার হাস রাষ্ট্রদূত হিসেবে তার আচরণের সীমা মেনে চলবেন বলে আশা করে সরকার। কোনও রাজনৈতিক দলের পক্ষে-বিপক্ষে অবস্থান নেওয়া উচিত নয়।
এদিকে, পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ কে আব্দুল মোমেন বৃহস্পতিবার সাংবাদিকদের বলেন, যুক্তরাষ্ট্রের ঘোষণা করা নতুন শ্রমনীতি নিয়ে বাংলাদেশ উদ্বিগ্ন না। এ নিয়ে দুশ্চিন্তারও কোনো কারণ নেই। তবে শ্রমিকদের কল্যাণে যেকোনো পদক্ষেপে আমরা সন্তোষ প্রকাশ করি। এই শ্রমনীতির ফলে আমাদের ব্যবসা-বাণিজ্যে কোনো প্রভাব পড়বে না।
যুক্তরাষ্ট্র-চীনের মধ্যে ব্যবসা হচ্ছে না? আমাদের এখানে যুক্তরাষ্ট্রের কোটা উঠে গেলে, তখন অনেকেই দুশ্চিন্তা করেছিলেন। পরে এটার কোনো প্রভাব পড়েনি। পররাষ্ট্রসচিবের সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের রাষ্ট্রদূতের বৈঠক নিয়ে জানতে চাইলে পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, এটা একটি রুটিন বৈঠক। এই বৈঠকের বিষয়ে আপানারা (সাংবাদিকরা) জানলেন কীভাবে। আপনারা সবকিছুই জেনে যান।
গত ২০ নভেম্বর ওয়াশিংটনে অবস্থিত বাংলাদেশ মিশন বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের চিঠি দিয়ে জানায় যে প্রেসিডেন্ট বাইডেনের শ্রমনীতি স্মারকের আওতায় বাংলাদেশকে লক্ষ্যবস্তুতে পরিণত করা হতে পারে। এই বিষয়ে জানতে চাইলে পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ কে আব্দুল মোমেন বলেন, দূতাবাস মন্ত্রণালয়ে চিঠি দিয়েছে। সেটা দিতেই পারে। আমি বিস্তারিত জানি না। তবে আপনাদের মধ্যে দেশপ্রেমের অভাব আছে বলেই, আপনারা এসব নিয়ে নিউজ করেন। অন্য কোনো দেশের সাংবাদিকরা হলে এসব নিয়ে নিউজ লিখতেন না।
বিশ্বজুড়ে শ্রমিকদের অধিকার ও তাদের মানোন্নয়ন নিয়ে নতুন স্মারকপত্র প্রকাশের পর মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী অ্যান্থনি ব্লিনকেন তার বক্তব্যে বাংলাদেশের পোষাক শ্রমিক নেতা কল্পনা আক্তারের কথা উল্লেখ করেন। পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী মো. শাহরিয়ার আলম ২১ নভেম্বর সাংবাদিকদের বলেন, কল্পনা আক্তারের কথা কেন উল্লেখ করা হল, সে বিষয়ে যুক্তরাষ্ট্রের কাছে ব্যাখ্যা জানতে চাইবে বাংলাদেশ।
পররাষ্ট্রমন্ত্রীর কাছে বৃহস্পতিবার সাংবাদিকরা জানতে চান যে বাংলাদেশ ব্যাখ্যা চেয়েছে কিনা? জবাবে পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ কে আব্দুল মোমেন বলেন, এই বিষয়ে আমি জানি না।