পরীক্ষামূলক সম্প্রচার চলছে...
শনিবার, জুলাই ২৭, ২০২৪

বাংলাদেশের নির্বাচন নিয়ে রাশিয়া-যুক্তরাষ্ট্রের বাহাস

ছয় দফা নিউজ ডেস্ক:
বাংলাদেশের নির্বাচন নিয়ে যুক্তরাষ্ট্র অভ্যন্তরীণ ইস্যুতে হস্তক্ষেপ করছে বলে রাশিয়া অভিযোগ করেছে। যুক্তরাষ্ট্র বলছে যে তারা বাংলাদেশে একটি শান্তিপূর্ণ নির্বাচন দেখতে চায় এবং নির্দিষ্ট কোনো দলকে সমর্থন করে না। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, ইউক্রেন যুদ্ধের সময় থেকে বাংলাদেশে রাশিয়া-যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যে পাল্টাপাল্টি বিবৃতি দিতে লক্ষ্য করা গেছে। যা ভূ-রাজনীতির অংশ।

রাশিয়ার পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র মারিয়া জাখারোভা বলেন, বাংলাদেশে নিযুক্ত যুক্তরাষ্ট্রের রাষ্ট্রদূত পিটার হাস গত অক্টোবরের শেষে স্থানীয় বিরোধীদলের নেতার সঙ্গে সরকারের বিরুদ্ধে সমাবেশ করার পরিকল্পনা নিয়ে আলাপ করেছেন। যা বাংলাদেশের অভ্যন্তরীণ ইস্যুতে যুক্তরাষ্ট্রের হস্তক্ষেপের চেষ্টা। রাশিয়ার পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র মারিয়া জাখারোভার এই বক্তব্য ঢাকায় অবস্থিত রাশিয়ান দূতাবাসের সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে বুধবার (২২ নভেম্বর) প্রকাশ করা হয়। যা শনিবার (২৫ নভেম্বর) আবারো প্রকাশ করা হয়।

রাশিয়ান মুখপাত্র মারিয়া জাখারোভা বলেন, গত অক্টোবরের শেষে বাংলাদেশে মার্কিন রাষ্ট্রদূত পিটার হাস সরকারবিরোধী সমাবেশের পরিকল্পনা করতে বিরোধী দলের এক সদস্যের সঙ্গে দেখা করেন। ওই বৈঠকের তথ্য জনসমক্ষেও এসেছে। ওই বৈঠকে তাদের মধ্যে বাংলাদেশে সরকারবিরোধী বিক্ষোভ সংগঠিত করার পরিকল্পনা নিয়ে আলোচনা হয়েছে। বিশেষ করে যুক্তরাষ্ট্রের রাষ্ট্রদূত তার কথোপকথনের সময় সংশ্লিষ্টদের এই প্রতিশ্রুতি দেন যে বাংলাদেশ কর্তৃপক্ষ শান্তিপূর্ণ বিক্ষোভে অংশগ্রহণকারীদের বিরুদ্ধে বল প্রয়োগ করলে যুক্তরাষ্ট্র তথ্য দিয়ে সহায়তা করবে। যুক্তরাষ্ট্র তথ্য সহায়তার আশ্বাস যুক্তরাজ্য, অস্ট্রেলিয়া এবং আরও কয়েকটি দেশের দূতাবাসের পক্ষ থেকে দিয়েছে বলে জানা গেছে। এ ধরনের কর্মকাণ্ড বাংলাদেশের অভ্যন্তরীণ ইস্যুতে হস্তক্ষেপ করার সামিল। স্বচ্ছ, নিরপেক্ষ ও অংশগ্রহণমূলক নির্বাচনের কথা বলা হলেও আড়ালে বাংলাদেশের অভ্যন্তরীণ রাজনৈতিক প্রক্রিয়াকে প্রভাবিত করছে যুক্তরাষ্ট্র ও তার মিত্র দেশগুলো। এমন তৎপরতা ১৯৬১ সালের ভিয়েনা সনদের সুস্পষ্ট লঙ্ঘন। আমাদের (রাশিয়ার) বিশ্বাস আছে যে সংবিধান অনুযায়ী বিদেশিদের সহযোগিতা ছাড়াই স্বাধীনভাবে বাংলাদেশ স্বাধীনভাবে ২০২৪ সালের ৭ জানুয়ারির সংসদ নির্বাচন পরিচালনা করতে পারবে।

বাংলাদেশের নির্বাচন নিয়ে রাশিয়ার এমন বিবৃতির পর ঢাকায় অবস্থিত যুক্তরাষ্ট্র দূতাবাসের মুখপাত্র স্টিফেন আইবেলি বলেন, রাষ্ট্রদূত পিটার হাস ও যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্রনীতি নিয়ে রাশিয়ার পররাষ্ট্র দফতরের মুখপাত্র মারিয়া জাখারোভা যে অপব্যাখ্যা দিয়েছেন সে সম্পর্কে যুক্তরাষ্ট্র অবগত। যুক্তরাষ্ট্র বাংলাদেশের কোনো একটি নির্দিষ্ট দলকে সমর্থন করে না। বাংলাদেশের জনগণের মতো যুক্তরাষ্ট্রও চায় যে আসন্ন নির্বাচন শান্তিপূর্ণ উপায়ে অবাধ ও সুষ্ঠুভাবে অনুষ্ঠিত নির্বাচন। যুক্তরাষ্ট্র দূতাবাসের কর্মীরা সরকার, বিরোধী দল, নাগরিক সমাজ ও সকল অংশীদারদের সঙ্গে যোগাযোগ রাখছে এবং ভবিষ্যতেও রাখবে, যাতে অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচনের অভিন্ন লক্ষ্য পূরণ হয়।

কূটনৈতিক সূত্রগুলো বলছে, বাংলাদেশে রাশিয়া-যুক্তরাষ্ট্রের বাহাস নতুন কিছু নয়। ইউক্রেন যুদ্ধের পর থেকেই বিশ্বের এই দুইটি বড় দেশ ঢাকায় নিজেদের মধ্যে বাহাস করছেন। এর আগে, গত বছরের শেষ দিকে যুক্তরাষ্ট্রের রাষ্ট্রদূত পিটার হাস ঢাকায় বিএনপির নিখোঁজ নেতা সায়েদুল ইসলাম সুমনের বাসায় গিয়ে সরকারপন্থি অন্য একটি সংগঠনের বিক্ষোভের মুখে পড়েন। ওই সময়ে রাশিয়ার মুখপাত্র মারিয়া জাখারোভ ব্রিফিং করে বলেন, এই ঘটনায় যুক্তরাষ্ট্রের রাষ্ট্রদূত বাংলাদেশের জনগণের অধিকারে আদায়ের দোহাই দিয়ে দেশটির অভ্যন্তরীণ ইস্যুতে প্রভাব বিস্তারের চেষ্টা করছেন। গত বছর রাশিয়া আরো বলেছে যে যুক্তরাষ্ট্র এবং তার মিত্ররা গণতন্ত্রের নামে বাংলাদেশের অভ্যন্তরীণ ইস্যুতে হস্তক্ষেপ করে যাচ্ছে। রাশিয়ার পর্যবেক্ষণে বিষয়গুলো রয়েছে এবং বাংলাদেশসহ অন্যান্য দেশের অভ্যন্তরীণ বিষয়ে হস্তক্ষেপ না করার নীতিকে সব সময় মেনে চলায় রাশিয়া প্রতিশ্রুতিবদ্ধ।

রাশিয়ান দূতাবাস তাদের ফেসবুক পেজে গত বছরের ডিসেম্বরের শেষদিকে জানায়, বাংলাদেশের অভ্যন্তরীণ বিষয়ে হস্তক্ষেপ না করতে রাশিয়া প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। রাশিয়ান দূতাবাসের এই পোস্টের পরপরই যুক্তরাষ্ট্র দূতাবাস রাশিয়ার ওই বক্তব্য নিয়ে ইংরেজি দৈনিক ডেইলি স্টারের একটি প্রতিবেদন পোস্ট করে। পোস্টটিতে প্রশ্ন করা হয়, এটা কি ইউক্রেনের ক্ষেত্রে প্রযোজ্য? এরপর যুক্তরাষ্ট্র ও পশ্চিমা বিশ্বের পররাষ্ট্রনীতিকে ব্যঙ্গ করে রাশিয়ান দূতাবাস টুইটারে একটি কার্টুন প্রকাশ করে। কার্টুনের এক পাশে ৪ ধাপে পাখির ছবি, অপর পাশে ৪ ধাপে যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, ইউরোপীয় ইউনিয়ন ও ইউক্রেনের পতাকা। কার্টুনে ইউক্রেন যুদ্ধের বিষয়ে যুক্তরাষ্ট্র পশ্চিমা বিশ্বকে নেতৃত্ব দিচ্ছে এবং ইউক্রেন এই ধাপের সবচেয়ে নিচের স্তরে আছে বলে বোঝানো হচ্ছে। এছাড়া পশ্চিমাবিশ্বের বাংলাদেশের নির্বাচন নিয়ে আগ্রহের পরিপ্রেক্ষিতে চট্টগ্রামে এক অনুষ্ঠানে রাশিয়ান রাষ্ট্রদূত আলেকজান্ডার ভি মান্টিটস্কি গত ৯ জুলাই বলেন, বাংলাদেশই ঠিক করবে কোন প্রক্রিয়ায় নির্বাচন হবে।

বাংলাদেশের নির্বাচন নিয়ে রাশিয়া-যুক্তরাষ্ট্রের বাহাস নিয়ে সাবেক পররাষ্ট্র সচিব মো. তৌহিদ হোসেন দৈনিক সময়ের আলোকে বলেন, বিষয়টি ভূ-রাজনৈতিক। বিশ্বের বড় দুইটি দেশের এমন আচরণের পেছনে তাদের নিজস্ব স্বার্থ রয়েছে। মূলত বাংলাদেশ ঘিরে একটি সমীকরণ দাঁড়িয়ে যাওয়ার উপক্রম হয়েছে। যার একদিকে চীন-ভারতের সঙ্গে রাশিয়া অন্যদিকে যুক্তরাষ্ট্র ও তার মিত্ররা। এমন পরিস্থিতিতে আমাদের সতর্ক থাকতে হবে।

ওয়াশিংটনভিত্তিক নীতি গবেষণা প্রতিষ্ঠান উইলসন সেন্টারের দক্ষিণ এশিয়া ইনস্টিটিউটের পরিচালক মাইকেল কুগেলম্যান ফরেন পলিসিতে প্রকাশিত এক নিবন্ধে বলেন, রাশিয়া ও যুক্তরাষ্ট্রের নিজস্ব প্রতিদ্বন্দ্বিতা ঢাকার নিরপেক্ষ পররাষ্ট্রনীতিকে নতুন চ্যালেঞ্জে ফেলেছে। এইক্ষেত্রে বাংলাদেশ চাচ্ছে যুক্তরাষ্ট্র এবং একইসঙ্গে রাশিয়ার সঙ্গে সুসম্পর্ক বজায় রাখতে।

তথ্যসূত্রঃসময়ের আলো

আরো পড়ুন

মতামত দিন

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে

সর্বশেষ সংবাদসমূহ

বিশেষ সংবাদ