ছয় দফা নিউজ ডেস্ক:
গাজায় যুদ্ধবিরতির দাবিতে ক্রমেই উত্তাল হয়ে উঠছে বিশ্ব। এদিকে আবার জিম্মিদের মুক্ত করতে পদক্ষেপের দাবি জোরালো হচ্ছে ইসরাইলের অভ্যন্তরে। সবমিলে ঘরে-বাইরে বেকায়দায় রয়েছেন ইসরাইলি প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু।
জিম্মিদের মুক্তির দাবিতে শনিবার ইসরাইলের হাজার হাজার মানুষ জেরুজালেমে পদযাত্রা করেছেন। এদিকে গাজায় ইসরাইলের হামলার প্রতিবাদে ইরানে বিক্ষোভ করেছে কয়েক হাজার মানুষ। দেশটির শীর্ষ সেনা কমান্ডার নিন্দা জানিয়ে বলেছেন, ইসরাইল ইতিহাসের আস্তাকুঁড়ে নিক্ষিপ্ত হবে। গাজা উপত্যকায় যুদ্ধবিরতির দাবি জানিয়ে দক্ষিণ কোরিয়াতেও এক দল অধিকারকর্মী বিক্ষোভ করেছেন।
জিম্মি মুক্তির দাবিতে বিক্ষোভ : পাঁচদিন আগে শুরু করা জিম্মিদের স্বজন ও তাদের সমর্থকদের এক পদযাত্রা শনিবার জেরুজালেমে পৌঁছেছে। সেখানে জিম্মিদের মুক্তির ব্যবস্থা করতে নেতানিয়াহু সরকারের ব্যর্থতার অভিযোগ তুলেছেন তারা।
জেরুজালেম বিক্ষোভে অংশ নেওয়া নোয়াম অ্যালন নামের এক তরুণ বলেন, তেল আবিব-জেরুজালেম মহাসড়কে বিক্ষোভে যোগ দেওয়া মানুষের সংখ্যা প্রায় ২০ হাজার। জিম্মিদের ফিরিয়ে আনার জন্য সর্বোচ্চ চেষ্টা করতে ইসরাইলি সরকারের ওপর চাপ তৈরির লক্ষ্যে এই বিক্ষোভ করছেন তারা।
গত ৭৮ অক্টোবর হামাসের যোদ্ধারা ইসরাইলে ঢুকে যে ২৪০ জনের বেশি মানুষকে ধরে নিয়ে জিম্মি করেছেন, তাদের মধ্যে নোয়ামের প্রেমিকাও রয়েছেন। এই তরুণ বলেন, আমরা আশা করছি তারা আমাদের সঙ্গে দেখা করবে। আমরা আশা করছি, জিম্মিদের কীভাবে ফিরিয়ে আনা হবে, সেই বিষয়ে তারা আমাদের জানাবেন। তিনি বলেন, আমরা আর অপেক্ষা করতে পারছি না। আমরা যেকোনো মূল্যে জিম্মিদের ফিরিয়ে আনার দাবি জানাই। তাদের এই মুহূর্তে উদ্ধারের দাবি জানাচ্ছি।
জিম্মিদের স্বজন ও বন্ধুদের অনেকেই আশঙ্কা প্রকাশ করে বলেছেন, অবরুদ্ধ গাজায় হামাসকে ধ্বংস করতে ইসরাইল হামলা চালানোর যে পরিকল্পনা করেছে, তাতে জিম্মিরাও ক্ষতিগ্রস্ত হবেন। তবে ইসরাইলের সরকার বলছে, গাজায় চলমান স্থল হামলা জিম্মিদের উদ্ধারের সম্ভাবনা আরও বাড়িয়ে তুলবে। সম্ভাব্য বন্দি বিনিময়ের মাধ্যমে জিম্মিদের মুক্ত করার পথ তৈরি হবে।
কিন্তু হামাসের হামলায় ইসরাইলের সরকার অন্ধ হয়ে গেছে বলে অভিযোগ করেছেন অনেকে। জেরুজালেমে অভিমুখে শুরু করা পদযাত্রায় যোগ দিয়েছেন ইসরাইলের মধ্যপন্থি বিরোধীদলীয় নেতা ইয়ার লাপিদ। হামাসের বিরুদ্ধে যুদ্ধের অন্যতম সমর্থক হলেও তিনি ইসরাইলের প্রধানমন্ত্রী নেতানিয়াহুর পদত্যাগের দাবি তুলেছেন।
ইরানে ইসরাইলবিরোধী বিক্ষোভ : ইরানের ইসলামিক রেভল্যুশনারি গার্ডের কমান্ডার হোসেন সালামি তেহরানে বিক্ষোভ সমাবেশে বলেছেন, ‘ফিলিস্তিন যুদ্ধের পথে রয়েছে। ইসরাইলকে পরাজয়ের সম্মুখীন হতে হবে। ইতিহাসের আস্তাকুঁড়ে শেষ হয়ে যাবে ইসরাইল।’ ইরানের রাষ্ট্রীয় টিভিতে কমান্ডার সালামির ওই বক্তব্য সরাসরি সম্প্রচার করা হয়।
ইরানের রাজধানী তেহরানে স্থানীয় সময় শনিবার ওই বিক্ষোভ হয়েছে। এরপর বিক্ষোভ অন্যান্য শহরেও ছড়িয়ে পড়ে। স্থানীয় সংবাদমাধ্যমের খবর বলছে, বিক্ষোভকারীরা গাজার নিপীড়িত শিশুদের পক্ষে স্লোগান দিয়েছেন। তারা ‘ফিলিস্তিন একা নয়’ বলেও স্লোগান দিয়েছে। ফিলিস্তিনি কর্তৃপক্ষ বলছে, ইসরাইলের বিমান ও স্থল অভিযানে এ পর্যন্ত ১২ হাজার মানুষ নিহত হয়েছেন। এর মধ্যে ৫ হাজার শিশু।
যুদ্ধবিরতির দাবি দক্ষিণ কোরিয়ায় : শনিবার সিউলের রাস্তায় ২ হাজার জোড়া জুতা সাজিয়ে রেখে ফিলিস্তিনিদের প্রতি সংহতি জানিয়েছেন। জুতাগুলো চলমান যুদ্ধে নিহত ফিলিস্তিনিদের প্রতিনিধিত্ব করছে। ৩০ জনের মতো অধিকারকর্মী বিক্ষোভে অংশ নিয়েছিলেন। তারা স্লোগান দিচ্ছিলেন-‘ফিলিস্তিনিদের মুক্ত কর।’ বিবিসির এক প্রতিবেদনে বলা হয়, বিক্ষোভকারীদের হাতে থাকা প্ল্যাকার্ডে লেখা ছিল-‘যুদ্ধ বন্ধ কর’, ‘দখলদারি বন্ধ কর’, ‘গাজা থেকে অবরোধ তুলে নাও’।