ছয় দফা নিউজ ডেস্ক: রোহিঙ্গাদের মিয়ানমারে ফেরত পাঠানোর দাবিতে ইন্দোনেশিয়ার একটি আশ্রয় শিবিরে হামলা চালিয়েছে একদল শিক্ষার্থী। গত কয়েক সপ্তাহে নৌকায় করে দেশটিতে আশ্রয় নিয়েছে হাজারের বেশি রোহিঙ্গা।
নভেম্বর থেকে এপ্রিলের মধ্যে সাধারণত সমুদ্র কিছুটা শান্ত থাকে। এ সময়ে রোহিঙ্গাদের নৌকায় করে প্রতিবেশী দেশ থাইল্যান্ড, মালয়েশিয়া ও মুসলিম সংখ্যাগরিষ্ঠ ইন্দোনেশিয়ায় নিয়ে যায় পাচারকারীরা।
গত কয়েক সপ্তাহে কাঠের নৌকায় করে অবৈধভাবে সাগর পাড়ি দিয়ে ইন্দোনেশিয়ার আচেহ প্রদেশের উপকূলে পৌঁছায় ১ হাজারের বেশি রোহিঙ্গা। তারা মিয়ানমার ও বাংলাদেশ থেকে পালিয়ে যায়।
রোহিঙ্গাদের মিয়ানমারে ফেরত পাঠানোর দাবি জানায় স্থানীয় লোকজন ও শিক্ষার্থীরা। বুধবার (২৮ ডিসেম্বর) বান্দা আচেহ নগরীর একটি রোহিঙ্গা আশ্রয় শিবিরে আচমকা হামলা চালায় একদল শিক্ষার্থী। বিক্ষুব্ধরা পুলিশ বেস্টনি ভেঙে জোর করে আশ্রয় শিবিরে ঢুকে পড়ে।
স্থানীয়রা বলেন, ‘এখানে রোহিঙ্গাদের কেউ আমন্ত্রণ জানায়নি। তারা জীবিকার উদ্দেশে অপরাধমূলক কাজ করছে। সরকার যদি রোহিঙ্গা গোষ্ঠীকে বিতাড়িত করতে না পারে, তাহলে ছাত্ররা লড়াই করবে। আচেহ প্রদেশের অনেক দরিদ্র মানুষ। এ অবস্থায় কেন হাজার হাজার রোহিঙ্গার দায়িত্ব নেব।’
এদিকে, আচমকা এমন হামলায় রোহিঙ্গা নারী, পুরুষ ও শিশুরা হতভম্ব হয়ে যায়। ভয়ে অনেকে কান্নাকাটি শুরু করে। পরে কর্তৃপক্ষের সহায়তায় ১৩৭ জন রোহিঙ্গাকে দুটি ট্রাকে করে বিকল্প আশ্রয় কেন্দ্রে নিয়ে যাওয়া হয়।
রোহিঙ্গারা বলেন, আমাদের পায়ের নিচে কোথাও মাটি নেই। মিয়ানমার থেকে পালিয়ে আসার পর বাংলাদেশে বা ইন্দোনেশিয়ায় কোথাও আমাদের জায়গা ঠাই নেই। এখানে অনেক ভয়ে আছি। আমার পরিবাবার বাংলাদেশে। এখন আমি কোথায় যাব জানি না।
জাতিসংঘের শরণার্থী বিষয়ক সংস্থা ইউএনএইচসিআর উদ্বেগ জানিয়ে রোহিঙ্গাদের সুরক্ষায় ইন্দোনেশিয়ার প্রতি আহ্বান জানিয়েছে। রোহিঙ্গার এই ঢলের জন্য মানবপাচারকে দায়ী করেছেন দেশটির প্রেসিডেন্ট। অস্থায়ী আশ্রয়ের জন্য আন্তর্জাতিক সংস্থাগুলোর সঙ্গে কাজ করার প্রতিশ্রুতিও দেন তিনি।
৪০০ রোহিঙ্গাকে পাচারের অভিযোগে এক বাংলাদেশি ও এক রোহিঙ্গা যুবককে আটক করেছে ইন্দোনেশিয়ার পুলিশ। তারা চলতি মাসে বাংলাদেশ থেকে রোহিঙ্গার একটি দলকে নৌকায় করে ইন্দোনেশিয়ার উপকূলে নিয়ে আসে।
আচেহ পুলিশ কর্মকর্তা ফাদিল্লাহ আদিত্য প্রাতমা বলেন, ‘সন্দেহভাজনদের তথ্য মতে, ৭০ হাজার টাকার চুক্তিতে বাংলাদেশ থেকে রোহিঙ্গাদের ইন্দোনেশিয়ায় পাচার করে তারা। উদ্দেশ্যমূলকভাবে রোহিঙ্গাদের ইন্দোনেশিয়ায় নিয়ে আসে। এ কথা তারা স্বীকার করেছে।’
জাতিসংঘের ১৯৫১ সালে শরণার্থী কনভেনশনে স্বাক্ষর করেনি ইন্দোনেশিয়া। তবুও দেশটি বিভিন্ন সময় শরণার্থীদের আশ্রয় দিয়ে জাতিসংঘের প্রশংসা কুড়িয়েছে।