ছয় দফা নিউজ ডেস্ক:
শেষ পর্যন্ত ইসরাইলে কাতারভিত্তিক সম্প্রচারমাধ্যম আলজাজিরার কার্যক্রম বন্ধ হতে চলেছে। এ-সংক্রান্ত এক প্রস্তাবে সর্বসম্মতিক্রমে ভোট দিয়েছে প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু নেতৃত্বাধীন মন্ত্রিসভা। রোববার সরকারি এক বিবৃতিতে ইসরাইলে আলজাজিরা বন্ধে মন্ত্রিসভার সম্মতির এই তথ্য জানানো হয়েছে। তবে ইসরাইলি সিদ্ধান্তের বিষয়ে রোববার আলজাজিরা তাৎক্ষণিকভাবে কোনো প্রতিক্রিয়া জানায়নি। এদিকে জিম্মিদের ফিরিয়ে আনার জন্য একটি চুক্তির দাবিতে শনিবার গভীর রাত পর্যন্ত ইসরাইলে বিক্ষোভ করেছে হাজার হাজার মানুষ। খবর বিবিসি ও রয়টার্সের।
গাজায় ফিলিস্তিনের মুক্তি আন্দোলনের সশস্ত্র সংগঠন হামাসের বিরুদ্ধে যুদ্ধ চালিয়ে যাচ্ছে ইসরাইল। তারা বলছে এই যুদ্ধ চলমান অবস্থায় আলজাজিরা তাদের জাতীয় নিরাপত্তার জন্য হুমকি। দেশটিতে কাতারি ওই সম্প্রচার মাধ্যমের কার্যক্রম সাময়িকভাবে বন্ধ করার অনুমতি দিয়ে সম্প্রতি ইসরাইলি পার্লামেন্টে একটি আইন পাস হয়। এরপর রোববার ইসরাইলের মন্ত্রিসভায় ভোটাভুটি হয়। এতে মন্ত্রিসভার প্রায় সব সদস্য ইসরাইলে আলজাজিরার কার্যক্রম বন্ধ করে দেওয়ার পক্ষে ভোট দেন।
মন্ত্রিসভার ভোটাভুটির পর সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম এক্সে এ-সংক্রান্ত একটি পোস্ট দেন নেতানিয়াহু। বলেন, ‘ইসরাইলে উসকানিমূলক চ্যানেল আলজাজিরা বন্ধ করা হবে।’ সরকারের বিবৃতিতে আরও বলা হয়েছে, ইসরাইলের যোগাযোগমন্ত্রী আইনটি কার্যকর করার আদেশে তাৎক্ষণিকভাবে স্বাক্ষর করেছেন। তবে দেশটির একজন আইনপ্রণেতা চ্যানেলটির কার্যক্রম বন্ধের সিদ্ধান্তের বিরোধিতা করেছেন। যে কারণে আলজাজিরা কর্তৃপক্ষ ইসরাইল সরকারের এই সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে সে দেশের আদালতে আপিল করতে পারবে।
বিবৃতিতে বলা হয়েছে, এই পদক্ষেপের মধ্যে ইসরাইলে আলজাজিরার কার্যালয় বন্ধ, সম্প্রচার সরঞ্জাম বাজেয়াপ্ত, ক্যাবল ও স্যাটেলাইট কোম্পানিগুলো থেকে চ্যানেলটি বিচ্ছিন্ন এবং এর ওয়েবসাইট ব্লক করে দেওয়ার কাজও অন্তর্ভুক্ত থাকবে।
মন্ত্রিসভার সিদ্ধান্তের পর কোনো প্রতিক্রিয়া না জানালেও নিরাপত্তার জন্য হুমকি বলে যে অভিযোগ আলজাজিরার বিরুদ্ধে তোলা হয়েছে; অতীতে তা প্রত্যাখ্যান করেছে কাতারি এই সম্প্রচারমাধ্যম। তারা বলেছে, ইসরাইলে কার্যক্রম বন্ধের উদ্যোগ আলজাজিরাকে নীরব করে দেওয়ার একটি চেষ্টা।
ইসরাইলে বিশাল বিক্ষোভ : জিম্মিদের ফিরিয়ে আনতে একটি চুক্তির দাবিতে শনিবার গভীর রাত পর্যন্ত তেল আবিবে বিক্ষোভ করেছে হাজার হাজার মানুষ। বিক্ষোভে অংশ নেওয়া বিক্ষোভকারীরা যুদ্ধবিরোধী স্লোগান দিয়েছে। বিক্ষোভকারীদের কেউ কেউ যুদ্ধ দীর্ঘায়িত করার জন্য ইসরাইলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহুর বিরুদ্ধে অভিযোগ করেছে। বিক্ষোভাকারীরা তেল আবিবের বিভিন্ন সড়ক আটকে দিয়েছিলেন। তবে সড়কে অবস্থান শেষে তারা আবার চলে যান। এরপর সেগুলো গাড়ি চলাচলের জন্য আবারও স্বাভাবিক হয়।
নাটালি এল্ডর নামের এক বিক্ষোভকারী বলেন, আমি এখানে একটি চুক্তিকে সমর্থন করার জন্য এসেছি। জিম্মিদের ফিরিয়ে আনতে হবে। সব জিম্মি, জীবিত, মৃতদের ফিরিয়ে আনতে হবে। এ ছাড়া এই সরকারকে পরিবর্তন করতে হবে। এ বছর ৬ মে ইয়োম হাশোহ হলোকাস্ট স্মরণ দিবসের আগে এই বিক্ষোভ করা হয়েছে। গাজায় যুদ্ধ বন্ধ করার জন্য আন্তর্জাতিক চাপের মধ্যেও গাজায় ইসরাইলি আগ্রাসন সাত মাসে গড়িয়েছে।
জিম্মি বার কুপারস্টেইনের খালা ওরা রুবিনস্টেইন বলেন, আশার কথা হলো, বার জীবিত আছেন। জিম্মিদের অনেককে মৃত বলে মনে করা হচ্ছে। কিন্তু তাদের সবাইকে ফেরত চায় তার তার পরিবার।
নেতানিয়াহু-বিরোধী বিক্ষোভ হয় জেরুজালেমেও। সেখানে বিক্ষোভকারীদের সঙ্গে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সংঘর্ষ হয়। সে সময় তারা প্যারিস স্কয়ারে জড়ো হন। সেখান থেকে পরবর্তীতে তাদের সরিয়ে দেওয়া হয়। জেরুজালেম থেকে দুজনকে গ্রেফতারও করা হয়।