পরীক্ষামূলক সম্প্রচার চলছে...
শনিবার, জুলাই ২৭, ২০২৪

অরুন্ধতী রায়: গাজা অবরোধ মানবতাবিরোধী অপরাধ, বিশ্বকে অবশ্যই হস্তক্ষেপ করতে হবে

ছয় দফা নিউজ ডেস্ক: আমি জনসাধারণের মঞ্চে উপস্থিত হতে পারি না, না, এমনকি জার্মানিতেও না, যেখানে আমি জানি আমার মতো দৃষ্টিভঙ্গি কার্যত নিষিদ্ধ; অথচ লাখ লাখ মানুষ- মুসলিম, খ্রিস্টান, হিন্দু, ইহুদি, কমিউনিস্ট, নাস্তিক, অজ্ঞেয়বাদী (জড়বস্তু ছাড়া অন্য কিছু বা ঈশ্বর সম্বন্ধে কিছুই জানা সম্ভব নয় বলে- বিশ্বাসী) প্রত্যেকেই গাজায় অবিলম্বে যুদ্ধবিরতির আহ্বান জানিয়ে বিশ্বজুড়ে বিক্ষোভ করছে।

যদি আমরা নির্লজ্জ এ হত্যাকাণ্ড চলতে দিতে থাকি, এমনকি যদি এটি আমাদের ব্যক্তিগত জীবনের আরো একান্ত পর্যায় বা ক্ষেত্রগুলোর মধ্যে দিয়ে সরাসরি চালিত হয়, তাহলে আমরাও এ অপরাধমূলক কর্মকাণ্ডের সঙ্গে জড়িত বলা যায়। আমাদের নৈতিকতার মধ্যে কিছু বিষয় চিরতরে পরিবর্তিত হবে। আমরা কি কেবল দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে হাসপাতালগুলোতে বোমাবর্ষণ, দশ লাখ মানুষের বাস্তুচ্যুতি এবং হাজার হাজার নিহত শিশুকে ধ্বংসস্তূপের নিচ থেকে বের করে আনতে দেখব? আমরা কি আবার মানুষগুলোকে এমনভাবে অমানবিকতার শিকার হতে দেখব যেখানে তাদের ধ্বংস কোনো বিষয়ই নয়?

পশ্চিম তীরে ইসরায়েলের দখলদারিত্ব এবং গাজা অবরোধ মানবতাবিরোধী অপরাধ। যুক্তরাষ্ট্র ও অন্যান্য দেশ যারা এ দখলদারিত্বের জন্য অর্থের জোগান দিচ্ছে– তারাও এ অপরাধের একটি পক্ষ। ঠিক এই মুহূর্তে আমরা যে ভয়াবহতা প্রত্যক্ষ করছি, হামাস ও ইসরায়েল কর্তৃক বেসামরিক নাগরিকদের অযৌক্তিক হত্যাকাণ্ড অবরোধ ও দখলদারিত্বেরই পরিণাম।

নৃশংসতা সম্পর্কে কোনো পরিমাণ মন্তব্য বা উভয়পক্ষের বাড়াবাড়ির বিষয়ে নিন্দা, অসঙ্গতিপূর্ণ তথ্য এগুলোর কিছুই এ সংকটের সমাধান দিতে পারবে না।

এই দখলদারিত্বই এমন পৈশাচিকতার জন্ম দিচ্ছে। এটি অপরাধী এবং ভুক্তভোগী উভয়ের প্রতিই সহিংসতা করছে। ভুক্তভোগীরা তো মারাই যাচ্ছে। কিন্তু অপরাধীরা যা করেছে সেটি নিয়েই তাদের বেঁচে থাকতে হবে। তাদের সন্তানরাও তাই করবে। কয়েক প্রজন্ম ধরে।

সামরিক পদক্ষেপ এ সংকটের সমাধান হতে পারে না। কেবল রাজনৈতিকভাবেই এর সমাধান করা যেতে পারে, যেখানে ইসরায়েলি ও ফিলিস্তিনিরা উভয়ই সমান অধিকার ও মর্যাদা নিয়ে একসাথে বা পাশাপাশি বসবাস করবে। বিশ্বকে অবশ্যই হস্তক্ষেপ করতে হবে। দখলদারিত্বের অবসান ঘটাতে হবে। ফিলিস্তিনিদের একটি টেকসই মাতৃভূমি থাকতে হবে।

তা নাহলে পশ্চিমা উদারনীতির যে নৈতিক ভিত্তি রয়েছে, তা হারিয়ে যাবে। এটা সবসময়ই ভণ্ডামীপূর্ণ ছিল, আমরা জানি। কিন্তু তারপরেও এটি এক প্রকার সুরক্ষা দিয়েছিল। কিন্তু, সেই সুরক্ষাও আমাদের চোখের সামনে থেকে হারিয়ে যাচ্ছে।

তাই ফিলিস্তিন ও ইসরায়েল উভয়ের স্বার্থে, যারা বেঁচে আছে তাদের স্বার্থে এবং নিহতদের নামে, ইসরায়েলের কারাগারে বন্দি ফিলিস্তিনি ও হামাসের হাতে জিম্মিদের স্বার্থে, সর্বোপরি মানবতার স্বার্থে এখনই যুদ্ধ বন্ধ করুন।

গত ১৬ নভেম্বর জার্মানির মিউনিখ লিটারেচার ফেস্টিভালে অরুন্ধতী রায়ের দেওয়া ভাষণের সারাংশ।

তথ্যসূত্রঃটিবিএস

আরো পড়ুন

মতামত দিন

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে

সর্বশেষ সংবাদসমূহ

বিশেষ সংবাদ