পরীক্ষামূলক সম্প্রচার চলছে...
শনিবার, জুলাই ২৭, ২০২৪

এলএনজিতে ব্যবসা বাড়ল মার্কিন কোম্পানির

তিন চুক্তি সই

ছয় দফা নিউজ ডেস্ক:
বাংলাদেশের তরলীকৃত প্রাকৃতিক গ্যাস (এলএনজি) খাতে যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক কোম্পানি এক্সিলারেট এনার্জির ব্যবসা আরও সম্প্রসারিত হয়েছে। মার্কিন কোম্পানিটি বর্তমানে মহেশখালীতে সমুদ্রে ভাসমান এলএনজি টার্মিনাল (এফএসআরইউ) পরিচালনা করছে। এই টার্মিনালের সক্ষমতা ২০ শতাংশ বাড়ানো হচ্ছে।

পায়রা সমুদ্রবন্দর এলাকায় আরও একটি এফএসআরইউ স্থাপনের অনুমতি পেয়েছে প্রতিষ্ঠানটি। এক্সিলারেটের কাছ থেকে বছরে ১০ লাখ টন এলএনজি কিনবে পেট্রোবাংলা।

গতকাল বুধবার রাতে রাজধানীর একটি হোটেলে পেট্রোবাংলা ও এক্সিলারেট এনার্জির মধ্যে এ সংক্রান্ত তিনটি চুক্তি সই হয়েছে। বর্তমানে দেশের জ্বালানি খাতে মার্কিন কোম্পানিগুলোর বিনিয়োগ প্রায় ৬০ শতাংশ। আগামী নির্বাচনকে কেন্দ্র করে এই অংশগ্রহণ আরও বাড়বে বলে মনে করছেন খাত-সংশ্লিষ্টরা। এক্সিলারেটের সঙ্গে চুক্তি এই প্রক্রিয়ার অংশ বলে মনে করছেন তারা। তবে চলমান ডলার সংকটের মধ্যেও এলএনজির মতো ব্যয়বহুল জ্বালানির চুক্তি নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন জ্বালানি বিশেষজ্ঞরা।

গতকাল রাতে পেট্রোবাংলা ও এক্সিলারেট এনার্জির মধ্যে দীর্ঘমেয়াদি এলএনজি ক্রয়, এলএনজি টার্মিনাল সম্প্রসারণ এবং পায়রায় এলএনজি টার্মিনাল স্থাপনে টার্মশিট চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়েছে। চুক্তিটিতে পেট্রোবাংলার বোর্ড সচিব রুচিরা ইসলাম এবং এক্সিলারেট এনার্জির এশিয়া-প্যাসিফিক অঞ্চলের ভাইস প্রেসিডেন্ট র‍্যামন ওয়াংদি স্বাক্ষর করেন।

চুক্তি অনুযায়ী, ২০২৬ সাল থেকে ১৫ বছর এলএনজি সরবরাহ করবে কোম্পানিটি। এক্সিলারেট ২০২৬ ও ২০২৭ সালে বছরে সাড়ে ৮ লাখ টন এবং পরবর্তী সময়ে ১০ লাখ টন করে এলএনজি সরবরাহ করবে বাংলাদেশকে। প্রতি ইউনিট এলএনজির দাম হবে অপরিশোধিত জ্বালানি তেলের দামের ১৩ দশমিক ৩৫ শতাংশের সঙ্গে দশমিক ৩৫ ডলার।

এলএনজি আমদানির পর তা রূপান্তরের মাধ্যমে গ্যাস পাইপলাইনে সরবরাহ করা হয়। মহেশখালীতে ভাসমান এলএনজি টার্মিনাল নির্মাণে পেট্রোবাংলার সঙ্গে এক্সিলারেট এনার্জি চুক্তি করেছিল ২০১৬ সালের ১৮ জুলাই। নির্মাণ শেষে ২০১৮ সালের ১৯ আগস্ট গ্যাস সরবরাহ শুরু করে কোম্পানিটি। এই টার্মিনালে বর্তমানে দিনে ৫০ কোটি ঘনফুট গ্যাস রূপান্তর করা যায়। গতকাল স্বাক্ষরিত চুক্তি অনুসারে, এফএসআরইউর এলএনজি রূপান্তরের সক্ষমতা আরও ১০ কোটি ঘনফুট বাড়িয়ে দৈনিক ৬০ কোটি ঘনফুট করা হবে।

খুলনা-বরিশালসহ দেশের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলে গ্যাস সরবরাহ বাড়াতে পটুয়াখালী জেলার পায়রা গভীর সমুদ্রে একটি এলএনজি টার্মিনাল নির্মাণ করবে এক্সিলারেট। পাইপলাইনসহ এই টার্মিনাল নির্মাণে চুক্তি করেছে এক্সিলারেট ও পেট্রোবাংলা।

চুক্তির বিষয়ে জানতে চাইলে কনজ্যুমার্স অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (ক্যাব) জ্বালানি উপদেষ্টা অধ্যাপক শামসুল আলম সমকালকে বলেন, দেশে বর্তমানে ডলার সংকট চলছে। অর্থনীতি ক্রান্তিকাল পার করছে। এখন সরকারের উচিত অর্থ সাশ্রয়ের উদ্যোগ নেওয়া। কিন্তু ব্যয় সাশ্রয় না করে ব্যয়বহুল এলএনজি কেনার চুক্তি করা হয়েছে। নির্বাচনকে সামনে রেখে নিজেদের স্বার্থরক্ষায় সরকার এই কাজ করছে।

যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে ব্যবসা বাড়বে

চুক্তি স্বাক্ষর অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তৃতায় প্রধানমন্ত্রীর জ্বালানি উপদেষ্টা ড. তৌফিক-ই-ইলাহী চৌধুরী বলেন, বর্তমান সরকার বিদ্যুৎ ও জ্বালানি খাতে ব্যাপক উন্নয়ন করেছে। উন্নয়নের এই ধারা ব্যাহত করতে রাজনৈতিক সহিংসতা চালানো হচ্ছে। প্রতিপক্ষ রাজনৈতিক দলের এই সহিংসতার প্রতিবাদ জানাতে যুক্তরাষ্ট্রের বিনিয়োগকারীসহ ব্যবসায়ীদের আহ্বান জানান তিনি।

বিদ্যুৎ জ্বালানি ও খনিজসম্পদ প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ বলেন, বর্তমানে দেশের জ্বালানি খাতের ৬০ শতাংশ বিনিয়োগই যুক্তরাষ্ট্রের। এক্সিলারেট এনার্জি বাংলাদেশের জ্বালানি খাতের সঙ্গে দীর্ঘদিন ধরে যুক্ত রয়েছে। মার্কিন কোম্পানি শেভরন দেশীয় গ্যাসের ৬৪ শতাংশ সরবরাহ করছে। বিদ্যুৎ খাতে উপমহাদেশের মধ্যে বাংলাদেশে সবচেয়ে বেশি বিনিয়োগ রয়েছে যুক্তরাষ্ট্রের জেনারেল ইলেক্ট্রিকের (জিই)।

প্রতিমন্ত্রী আরও বলেন, আগামীতে আরও বড় বিনিয়োগের সুযোগ রয়েছে। বাংলাদেশে সমুদ্রে গ্যাস পাওয়ার বিপুল সম্ভাবনা রয়েছে। নির্বাচনের পর আরও বড় বড় বিনিয়োগ আসবে, চুক্তি হবে।

অনুষ্ঠানে ঢাকায় নিযুক্ত মার্কিন রাষ্ট্রদূত পিটার হাস বলেন, যুক্তরাষ্ট্রের ৪ বিলিয়ন ডলারের সরাসরি বিনিয়োগ রয়েছে বাংলাদেশে, যা বৈদেশিক বিনিয়োগের মধ্যে দ্বিতীয়। বাংলাদেশের সঙ্গে আমাদের ভালো সম্পর্ক রয়েছে, সেটা আমরা এগিয়ে নিতে চাই। এক্সিলারেট এনার্জির সঙ্গে দীর্ঘমেয়াদি চুক্তিটি বাংলাদেশের জ্বালানি নিরাপত্তায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে।

অনুষ্ঠানে আরও উপস্থিত ছিলেন জ্বালানি সচিব নুরুল আলম, পেট্রোবাংলা চেয়ারম্যান জনেন্দ্রনাথ সরকার, এক্সিলারেট এনার্জির প্রেসিডেন্ট ও প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা স্টিভেন কোবোস প্রমুখ।

তথ্যসূত্রঃসমকাল

আরো পড়ুন

মতামত দিন

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে

সর্বশেষ সংবাদসমূহ

বিশেষ সংবাদ